Tuesday, 12 January 2016

বাংলাদেশি জ্যোতির্বিজ্ঞানীর ৫ মহাতারকা আবিষ্কার

বাংলাদেশি জ্যোতির্বিজ্ঞানীর ৫ মহাতারকা আবিষ্কার

একটি সূর্য আর তার চারপাশে আটটি গ্রহ নিয়ে সৌরজগৎ। সূর্যের শক্তিতেই টিকে আছে আটটি গ্রহের এই পরিবার। কিন্তু এমন নক্ষত্রের কথা ভাবা যায় যেটি ১৩ লাখ গ্রহকে টিকিয়ে রাখতে পারে, হতে পারে তাদের শক্তির অন্যতম উৎস!
আমরা যে ছায়াপথে আছি সেই আকাশগঙ্গায় আবিষ্কৃত এরকম একমাত্র সূর্য বা নক্ষত্র হচ্ছে ইটা কারিনা। সূর্যের চেয়ে প্রায় দেড়শ’ গুণ বড় এবং ৫০ লাখ গুণ বেশি উজ্জ্বল এ নক্ষত্রকে ইংরেজিতে বলা হয় সুপার স্টার। বাংলায় বলা যায় মহাতারকা বা বিশাল নক্ষত্র। পৃথিবী থেকে ইটা কারিনার দূরত্ব প্রায় সাড়ে সাত হাজার আলোকবর্ষ। তবে আকাশগঙ্গার বাইরে অন্য কয়েকটি ছায়াপথে ইটা কারিনার আরও পাঁচটি জমজ আবিষ্কার করেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। আর যুগান্তকারী এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশি জ্যোতির্বিজ্ঞানী রুবাব খান।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির বার্ষিক সভায় পুরো বিশ্বকে চমকে দেওয়ার মতো এই ঘোষণা দেন মাত্র ২৯ বছর বয়সী  জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. রুবাব খান।
দুটি মহাতারকা মিলে ইটা কারিনা সৌরমণ্ডল গঠিত। বড় তারকাটি সূর্যের চেয়ে এক থেকে দেড়শ’ গুণ বড়, আর তার ছোট সহচরটি সূর্যের চেয়ে ৩০ গুণ বড়। ছোটটি আবিষ্কৃত হয় ২০০৫ সালে।
এ পর্যন্ত এই দুটি মহাতারকার মিলিত শক্তি সম্পর্কেই ধারণা ছিল মানুষের। তবে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী রুবাব খান ও তার দল পুরো ধারণাই পাল্টে দিয়েছেন। নাসার গোডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে গবেষণার পর অভিনব তথ্য পান তারা। পৃথিবী থেকে দেড় কোটি থেকে দুই কোটি ৬০ লাখ আলোকবর্ষ দূরত্বের মধ্যে ইটা কারিনার কাছাকাছি আকার ও শক্তির আরও অন্তত পাঁচটি সুপার স্টার রয়েছে। নতুন নক্ষত্রগুলোকে ‘ইটার জমজ’ হিসেবেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন রুবাব ও তার দল।
নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ও স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এই মহাতারকাগুলোর খোঁজ পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী ইনসাইড সায়েন্সকে নতুন এ আবিষ্কার সম্পর্কে ড. রুবাব খান বলেছেন, ‘প্রথমে আশা করেছিলাম একটি নক্ষত্রের সন্ধান পাওয়া যাবে। তারপর একটার পর একটা পেতে থাকলাম। এভাবে ৫টি সুপার স্টারের সন্ধান পাওয়ার পর বিস্মিত হই।’
১৮৩৮ সালে ইটা কারিনার একটি বিস্ফোরণ থেকে সূর্যের চেয়ে দশগুণ বেশি শক্তি নির্গত হয়। রুবাব খান জানান, ‘ইটা কারিনাকে নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। তবে এখনও কেউ জানেন না, কেন এটি বিস্ফোরিত হয়েছিল। এটি বুঝতে হলে বিজ্ঞানীদের ইটা কারিনার মতো অন্য নক্ষত্র নিয়ে গবেষণা করতে হবে।’
বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে রুবাব খান বলেন, ‘এমন বিশাল কোনও নক্ষত্র যখন সুপারনোভা অবস্থায় পৌঁছে তখন তাতে বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় সৃষ্টি হয় জীবন সৃষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক উপাদান। তা ছড়িয়েও পড়ে তখন। এ জন্যই এত বিশাল নক্ষত্র তার আকৃতির কারণে থাকে অস্থিতিশীল।’
বাংলাদেশি তরুণ বিজ্ঞানীর এমন সাফল্যে অভিনন্দন জানিয়েছে ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। ফেসবুকে অফিসিয়াল পেজে রুবাব খান ও তার দলকে অভিনন্দন জানায় মার্কিন দূতাবাস। রাজধানীর ঢাকার উদয়ন স্কুল থেকে এসএসসি ও নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন রুবাব খান। ২০০৪ সালে তিনি জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যার ওপর পড়াশোনার জন্য কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে বৃত্তি লাভ করেন। ২০০৮ সালে সেখানে তিনি গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে সম্পন্ন করেন পিএইচডি ডিগ্রি। এখন তিনি নাসা গোডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ফেলো।