Saturday 19 May 2018

বাংলাদেশের ঈদের চাঁদ  মোটা হওয়ার কারণ ও চাঁদের বয়স ১৭ হতে ২১ ঘন্টা হলে ঈদের চাদঁ দেখা যাওয়ার গাণিতিক প্রমাণ

বাংলাদেশের ঈদের চাঁদ মোটা হওয়ার কারণ ও চাঁদের বয়স ১৭ হতে ২১ ঘন্টা হলে ঈদের চাদঁ দেখা যাওয়ার গাণিতিক প্রমাণ


বাংলাদেশের ঈদের চাঁদ বা হিলাল বা অর্ধচন্দ্র বা waxing crescent মোটা হওয়ার কারণ ও চাঁদের বয়স ১৭ হতে ২১ ঘন্টা ।ঈদের চাদঁ বা হিলাল বা waxing crescent দেখা যাওয়ার গাণিতিক প্রমাণ

চাঁদের গতি ও অমাবশ্যার পর অর্ধচন্দ্র বা ঈদের চাদ দেখার সর্বনিন্ম সময় হলো ১৭ হতে ২১ ঘন্টা ।
“আজ সন্ধ্যায় বহুদিন বাদে ঈদের চাঁদ পরিষ্কার দেখলাম। যদিও চাঁদটি একদিনের পুরনো মনে হলো।“ এমন কথা আমরা প্রায়ই বলি ।  আর আমরা পত্রিকাগুলোতে চাঁদের বয়স সম্পর্কিত খবর পড়ে থাকি । যেমন:
“বাংলাদেশে ঈদের চাঁদের বয়স ৩৫ ঘণ্টা ( ১ দিন ১১ ঘন্টা বা দেড় দিন) , অমুক তারিখ সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিটে সূর্য অস্ত যাবে। তার ১০ মিনিটের মধ্যে পশ্চিমাকাশে ঈদের চাঁদ দেখা যাবে ও এটি প্রায় ২০ মিনিটের মতো স্থায়ী হবে। যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন না থাকে তাহলে চাঁদ স্পষ্ট দেখা যাবে। তবে ওই দিন আকাশে মেঘ থাকবে।  


আর আকাশের অবস্থা বলছে,ঈদের দিন ঝুম বৃষ্টি না হলেও,গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিপাত হবে সারা দেশেই। অমুক অমুক জায়গা থেকে চাঁদ দেখার সম্ভাবনা বেশি। “


চাঁদের গতি ও অমাবশ্যার পর অর্ধচন্দ্র বা ঈদের চাদ দেখার সর্বনিন্ম সময় হলো ১৭ হতে ২১ ঘন্টা । এই বিষয়টা আমরা জ্যোর্তিবিজ্ঞানের গণিতিক সমাধানের মাধ্যমে জানবো ।  এসএসসি পাস যে কোন বিজ্ঞান শিক্ষার্থী অথবা জ্যামিতি ও ত্রিকোনমিতি চচাকারীগণ বিষয়টি সহজে বুঝতে পারবে ।

আগে বলে নিচ্ছি, জ্যোতির্বিজ্ঞানে ঈদের চাঁদকে Waxing Crescent যাকে বাংলায় বলা হয় মোমের  মতো চিকন চাঁদ বা অর্ধচন্দ্র বা ঈদের চাঁদ বা নবচন্দ্র   এবং আরবীতে বলা হয় হিলাল । আরবীতে হিলাল বলতে অমাবশ্যার পর সাত দিন পর্যন্ত দৃশ্যমান চাদকে বোঝানো হয় ।
জ্যোতির্বিজ্ঞান মতে ঈদের চাঁদ বা Waxing Crescent এতই চিকন হয় যে তা খালি চোখে দেখা যথেষ্ঠ পরিশ্রমের ব্যাপার ও তার বয়স হয় বড় জোড় ১৭ হতে ২১ ঘন্টা । কিন্তু বাংলাদেশে ঈদ চাদ বলে আমরা যা দেখে থাকি তার বয়স হয় ৩৬ হতে ৪৮ ঘন্টা । এজন্য আমরা সারা বিশ্বের সবগুলোদেশের ১ অথবা ২ দিন পর ঈদ করে থাকি ।

এবার আসছি গাণিতিক সমাধানে ।

চাদ পৃথিবীর চারপাশে ডিম্বাকৃতির কক্ষপথে ঘুরে । এজন্য বিভিন্ন সময় ঈদের চাদ দেখার সর্বনিন্ম বয়স স্হান, কাল ও অবস্হান অনুযায়ী ১৭ হতে ২১ ঘন্টা বয়সের হয়ে থাকে ।

তাহলে আমরা বিষয়টি জ্যামিতি ও ত্রিকোনমিতির সূত্রের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করি ।



এই ছবিতে, চাঁদের ব্যাসার্ধ  = r    কিলোমিটার
ঈদের চাদের মোটা হওয়ার পরিমাণ  = w  ডিগ্রি
ঈদের চাত দেখার জন্য পৃথিবী হতে সূর্য ও চাঁদের মধ্যকার কোণ = M    ডিগ্রি
চাঁদের ব্যাসার্ধ  r =  R+w
অতএব, R= r-w

আমরা জানি,
Cos M = ভূমি/অতিভুজ
বা, Cos M  = R/r
বা,  Cos M = (r –w )/ r      আগে  উল্লেখিত [ R= r-w]
বা, r Cos M = r -w
বা, r –w = r Cos M
বা, -w = - r + r Cos M
সুতরাং, w = r ( 1 – Cos M ) …………… ১ নং সমীকরণ

আমরা জ্যোতির্বিজ্ঞান হতে জানি, চাঁদ তার কক্ষপথে দৈনিক ১১.৫ হতে ১৩.১ ডিগ্রী বা গড়ে ১২.২ ডিগ্রী করে পৃথিবীর চার পাশে ঘুরে ।
আমরা হিসেবের সুবিধার্থে সর্বোচ্চ ১৩.১ ডিগ্রীকে আমরা বেছে নিলাম ।
তাহলে,
২৪ ঘন্টায় চাঁদ পৃথিবীর চার পাশে ঘুরে = ১৩.১ ডিগ্রী
অতএব, ১ ঘন্টায় চাঁদ পৃথিবীর চার পাশে ঘুরে = (১৩.১/২৪) ডিগ্রী  …………………. ২ নং সমীকরণ

মনে করি,
ঘন্টা হিসেবে জ্যোতির্বিজ্ঞান মতে ঈদের চাদের বয়স = A ঘন্টা ।
তাহলে, চাঁদ A ঘন্টায় ঘুরে = ১ M ডিগ্রী
 অতএব , চাঁদ ১ ঘন্টায় ঘুরে = (M/A)  ডিগ্রী ……………. ৩ নং সমীকরণ
সুতরাং, ২ ও ৩ নং সমীকরণ  সমান্বয় করে
(M/A)  = (১৩.১/২৪) ডিগ্রী  
বা M = (১৩.১ A )/২৪ ডিগ্রী
বা M = ০.৫৪৫৮৩ A ডিগ্রী
বা M = A( ০.৫৪৫৮৩  ) π / ১৮০ রেডিয়ান  
বা M =A ( ০.৫৪৫৮৩  )  (৩.১৪)/১৮০  রেডিয়ান
অতএব M= (০.০০৯৫২) A রেডিয়ান     ………………..৪ নং সমীকরণ





আমরা আবার চলে যাচ্ছি, ১ নং সমীকরণে
w = r ( 1 – Cos M ) …………… ১ নং সমীকরণ
আমরা জানি 1 – Cos M= ২ ‍(Sin M* Sin M )/২
Sin M এর কৌনিক অনুপাত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হওয়া হিসাবের সুবিধার জন্য আমরা ‍২ ‍(Sin M* Sin M ) কে (M*M) ধরছি ।
এর ফলি সমীকরণটির অবস্হা দাড়াচ্ছে,
1 – Cos M= ২ ‍(Sin M* Sin M )/2
বা 1 – Cos M = (M*M)/2
সুতরাং   ১ নং সমীকরণটি দাঁড়াচ্ছে
ঈদের চাদের মোটা হওয়ার পরিমাণ , w = r {(M*M)/2}     …………………….৫ নং সমীকরণ

= r [{(০.০০৯৫২) A*(০.০০৯৫২) A}/2]
বা, w  = r [{(০.০০৯৫২) A*(০.০০৯৫২) A} (০.৫) ]
বা, w  = r [{(০.৫) (০.০০৯৫২) A*(০.০০৯৫২) A}  ]
বা, w  = r (০.৫) [{(০.০০৯৫২) A*(০.০০৯৫২) A}  ]
বা, w  = r (০.৫) [{(০.০০৯৫২)*(০.০০৯৫২)A*A}  ]
বা, w  = r (০.৫) [{(০.০০৯৫২)A*A} ]
বা, w  = (১৭৩৮) (০.৫) [{(০.০০৯৫২)A*A} ]   (r, চাঁদের ব্যাসার্ধ ১৭৩৮ কিলোমিটার ধরা হলো)
বা, w  = (০.০৭৮৫৮৪০১৭)A*A    ……………………… ৬ নং সমীকরণ

ঈদের চাদের মোটা হওয়ার পরিমাণ, w –কে পৃথিবী হতে চাঁদের সর্বনিম্ন দূরত্ব দিয়ে ভাগ করলে পৃথিবীর উপর দাড়িয়ে থাকা পর্যবেক্ষকের চোখের সাথে তৈরী হওয়া দৃশ্যমাণ বিস্তৃত কোণ পাওয়া যায় ।
সুতরাং,  পর্যবেক্ষকের চোখের সাথে তৈরী হওয়া দৃশ্যমাণ বিস্তৃত কোণ= w/d
=[(০.০৭৮৫৮৪০১৭)A*A  ]/৩৫৭০০০ রেডিয়ান ।    (পৃথিবী হতে চাঁদের সর্বনিম্ন দূরত্ব=৩৫৭০০০)
=৫৭.৩২[(০.০৭৮৫৮৪০১৭)A*A  ]/৩৫৭০০০ ডিগ্রী । ( ১ রেডিয়ান = ৫৭.৩২ ডিগ্রী )
=৫৭.৩২*৬০[(০.০৭৮৫৮৪০১৭)A*A  ]/৩৫৭০০০ মিনিট ( ত্রিকোনমিতিতে ১ ডিগ্রী = ৬০ মিনিট)
=৫৭.৩২*৬০*৬০[(০.০৭৮৫৮৪০১৭)A*A  ]/৩৫৭০০০ মিনিট ( ত্রিকোনমিতিতে ১ মিনিট = ৬০ সেকেন্ড)
=০.০৪৫৪২৬০৩৮ A*A   সেকেন্ড ( seconds of arc )   ………………. ৭ নং সমীকরণ
৭ নং সমীকরণ হতে স্পষ্ট, সর্বনিম্ন বয়সের ঈদের চাদের মোটা হওয়ার পরিমাণ হলো ঈদের চাদের বয়সের বর্গের আনুপাতিক  এবং ০.০৪৫৪২৬০৩৮ হলো ধ্রুক যা শুধুমাত্র একটা এমন পরিমাণ যা পৃথিবী হতে চাদের দুরত্বের কারণে পরিবর্তিত হতে পারে ।

আমরা জানি, মানুষের চোখের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার শক্তি = ২০ আর্ক সেকেন্ড । অতএব মানুষ খালি চোখে সর্বনিম্ন বয়সের ঈদের চাদ তাড়াতাড়ি  দেখতে পাওয়ার একটা হিসেবে সহজে পাওয়া যায় ৭ নং সমীকরণকে মানুষের চোখের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার শক্তির সাথে সমান্বয় করলে ।

সুতরাং ,
২০ আর্ক সেকেন্ড  =০.০৪৫৪২৬০৩৮ A*A   সেকেন্ড ( seconds of arc )   ( ৭ নং সমীকরণ সমান্বয় করে )
বা A*A   = ০.০৪৫৪২৬০৩৮/ ২০
বা A = ২১ ঘন্টা  ……………………….. ৮ নং সমীকরণ

অর্থাত্ চাদের দৈনিক ঘুর্ণণ ১৩.১ ডিগ্রী, চাঁদের ব্যাসার্ধ ১৭৩৮ কিলোমিটার , পৃথিবী হতে চাঁদের সর্বনিম্ন দূরত্ব ৩৫৭০০০ ও মানুষের চোখের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ২০ আর্ক সেকেন্ড ধরে অমাবস্যার পর ঈদের চাদ দেখার বয় ২১ ঘন্টা প্রমাণ হলো । ২১ ঘন্টা বয়সের চাদ খুবই চিকন হয় ।


উপসংহার : কিছু শর্ত সাপেক্ষে চাঁদের বয়স ১৭ হতে ২১ ঘন্টা হলেই দেখা সম্ভব । রমজান মাস শুরু ও ঈদ পালন করা অথবা হিজরী ক্যালেন্ডার গণণার জন্য বর্তমান সময়কার বিজ্ঞানের কয়েকটি বিভাগ জড়িত । যেমন : গতিবিদ্যা, আলোক পদার্থ বিদ্যা, জীব পদার্ধ বিদ্যা এবং সবচেয়ে বেশি জড়িত গাণিতিক ও জ্যোতিষ্ক জ্যোতির্বিজ্ঞান । পাটিগণিতের মতো সহজসাধ্য ব্যাপার হিসেবে নেওয়া হয় বলেই বাংলাদেশের ঈদের চাঁদ মোটা দেখা যায় ও বাংলাদেশের লোকরা সারা বিশ্ব হতে এক বা দুই দিন পর রোজা ও ঈদ করে থাকে ।

লেখক :
Mohammad Fakhrul Islam ( Raad Fakhul )
BSc. (CSE ), LL.B. (Honrs) ,MA (Islamic Studies)
Founder : BAU, BASE, নিসর্গ ।


বিশেষ দ্রষ্টব্য : এই গবেষণামুলক সমাধানটির কোন অংশ লেখকের অনুমতি ছাড়া কোথাও কপি পেস্ট করা যাবে না তবে ফেসবুকে কেহ শেয়ার করতে চাইলে আগে লেখকে আইডির লিংক শেয়ার করতে হবে

 বাংলাদেশের ঈদের চাঁদ যা অন্য দেশের ঈদের চাঁদের চেয়ে মোটা । কারণ চাঁদের বয়স ৩৫ ঘন্টা হতে ৪৪ ঘন্টা ।