ক্যালেন্ডারের
দিকে তাকিয়ে দেখুন তো আজকের তারিখটি
কি? সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩।
আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ একটি দিনের কিন্তু রয়েছে বিশাল একটি তাৎপর্য। আজকের দিনটি হলো উত্তর গোলার্ধে “শারদ বিষুব” আর দক্ষিণ গোলার্ধে
“বাসন্ত বিষুব”, অর্থাৎ আজ দিন এবং
রাতের দৈর্ঘ্য সমান সমান, ১২ ঘণ্টা করে।
“শারদ
বিষুব” শব্দটির ইংরেজি হল “Autumnal Equinox”। Equionx শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ভাষা থেকে যার অর্থ হল “সমান রাত্রি”। পৃথিবী সারা
বছর তার অক্ষের ওপর একটু কাত হয়ে ঘুরতে থাকে। এর ফলে সূর্যের
আলো সমানভাবে বণ্টন হয় না এবং দেখা
যায় দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্যে তারতম্য এবং ঋতুবৈচিত্র্য। কিন্তু বছরে এমন দুইটি দিন আসে যখন পৃথিবী তার অক্ষের ওপরে একেবারে সোজা হয়ে যায়। এমন অবস্থায় বিষুবরেখার ওপরে লম্বভাবে সূর্যরশ্মি এসে পড়ে এবং দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়। এই দিনে সূর্য
আকাশের ঠিক পূর্ব থেকে ওঠে এবং ঠিক পশ্চিম বরাবর অস্ত যায়। বছরের অন্য সময়ে তার একটু হলেও তারতম্য হয়। এই দুইটি দিন
হল সেপ্টেম্বরের ২৩ তারিখ এবং
মার্চের ২০ তারিখ। সেপ্টেম্বরের
২৩ তারিখ উত্তর গোলার্ধে শারদ বিষুব এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাসন্ত বিষুব। আবার মার্চের ২০ তারিখ হল
উত্তর গোলার্ধে বাসন্ত বিষুব এবং দক্ষিণ গোলার্ধে শারদ বিষুব। শারদ বিষুবের পর থেকে দিনের
দৈর্ঘ্য কমে গিয়ে রাতের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেতে থাকে।
ঠিক
২৩ তারিখেই যে শারদ বিষুব
সংগঠিত হবে তা কিন্তু নির্দিষ্ট
নয়। সারা বিশ্বে ২৩ তারিখ ধরা
হলেও এটি ২২, ২৩ এমনকি ২৪
তারিখেও সঙ্ঘটিত হতে পারে। এর কারণ হল
প্রতি বছরই সূর্যের অবস্থানের একটু তারতম্য হয় এবং এই সময়টি এদিক
ওদিক হয়ে যেতে পারে। শরতের শেষ দিনটি হলো শারদ বিষুব। এর পর হেমন্ত
আসে এবং একটু একটু করে শীত পড়তে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতিতে এর রয়েছে বিশেষ
মর্যাদা। •- ফ্রেঞ্চ রিপাবলিকান ক্যালেন্ডারে এটি ছিল প্রথম দিন। •- জাপানে এই দিনটিকে বলা
হয় “শুবুন নো হি” এবং
এটি একটি জাতীয় ছুটির দিন। •- গ্রীক মিথলজি অনুযায়ী এটি হলো সেই দিন যখন দেবী পার্সিফোনি পৃথিবীর উপরিভাগ থেকে ফেরত যায় পাতালপুরিতে, তার স্বামী হেডিস এর কাছে। এ
সময়ে তারা নিরাপত্তা এবং গতবছরের সাফল্য এবং ব্যর্থতা নিয়ে প্রার্থনা করত।
শারদ
বিষুবের সময়ে চীনে মধ্য-শরৎ উৎসব বা চাঁদ উৎসব
সংগঠিত হয়। গ্রীষ্মের ফসল হলো এই উৎসবের মূল
কারণ এবং এর একটি বিশেষ
বৈশিষ্ট্য হল মুন কেক
বা চাঁদের পিঠা। শুধু পৃথিবী নয়, অন্যান্য গ্রহেও শারদ এবং বাসন্ত বিষুব দেখা যায়। তবে অন্য গ্রহে যেহেতু প্রাণ নেই তাই ঋতুগুলোকে অত আলাদা করে
বোঝা যায় না। নিজের অক্ষের ওপর কাত হয় ঘুরছে এমন যে কোনও গ্রহেই
বিষুব সঙ্ঘটিত হয়। সবচাইতে দর্শনীয় বিষুব হলো শনি গ্রহের বিষুব। এ সময়ে শনির
বলয় প্রায় অদৃশ্য হয়ে যায়।
প্রতি বছর অর্থাৎ ৩৬৫ দিনের মধ্যে দুটি দিন পৃথিবীর দিন ও রাতের ব্যাপ্তি সমান হয়ে থাকে। এর একটি দিন হলো ২১ মার্চ এবং অন্যটি ২৩ সেপ্টেম্বর। আজ ২৩ সেপ্টেম্বর সূর্য উত্তর আর দক্ষিণ অয়নান্তের মাঝামাঝি ঠিক বিষুব রেখা বরাবর কিরণ দেবে। সেই হিসেবে আজ পৃথিবীর সর্বত্র দিন-রাত সমান।
আগামীকাল থেকেই সূর্যের চারদিকে আপন কক্ষপথে পৃথিবীর পরিক্রমণের কারণে সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধের দিকে সরে যেতে শুরু করবে। আবহাওয়াও উত্তরা বাতাসে শীত থেকে শীতার্ত হবে। ধীরে ধীরে দীর্ঘ হতে পরবর্তী রাতগুলো।
এরপর ২০ মার্চ সূর্য তার দক্ষিণ গোলার্ধের অবস্থান শেষ করে উত্তর গোলার্ধের দিকে যাত্রাকালে রাতের শেষের দিকে বিষুবরেখার উপর অবস্থান নেয়। তাই পরদিন অর্থাৎ ২১ মার্চ পৃথিবীর উভয় গোলার্ধের দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য সমান হয়।