মোঃ আবিদ খান
আকাশ পর্যবেক্ষণের উৎকৃষ্ট সময়
শীতকাল। এ
সময়
রাতের
আকাশে
আকর্ষণীয় অনেক
গুলো
নক্ষত্র মন্ডলির সমাবেশ
ঘটে।
শীতের
মেঘহীন
আকাশে
কোন
তারকা
মন্ডল
বা
তারকা
পুঞ্জ
অবলোকন
করতে
হলে
যখন
চাঁদে
আলো
অনুপস্থিত এমন
সময়
শেষ
পৃষ্ঠায় নির্দেশিত মানচিত্র নিয়ে
উত্তর
গোলার্ধের তারকামন্ডল বের
করার
জন্য
প্রথমে
মানচিত্রটির পূর্ব
দিকটা
ডান
হাতে
ধরে
উত্তর
দিকে
মুখ
করে
দাড়ান।
আবার
দক্ষিণ
গোলার্ধের তারকা
মন্ডল
সমূহ
বের
করার
জন্য
মানচিত্রটির পশ্চিম
দিককে
বাম
হাতে
ধরে
দক্ষিণ
দিকে
মুখ
করে
দাড়ান।
প্রথমে
উজ্জ্বল নক্ষত্র গুলির
সঙ্গে
পরিচিত
হোন।
পরে
উজ্জ্বল নক্ষত্র গুলির
সাহায্য নিয়ে
অন্যান্য নক্ষত্র বা
নক্ষত্র মন্ডল
খুজে
বের
করুন।
শীতকালের রাতের
আকাশে
নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং
জানুয়ারী মাসের
উল্লেখযোগ্য নক্ষত্রমন্ডল গুলিকে
সন্নিবেশ করা
হয়েছে।
এখানে
পুনরায়
বলে
রাখা
দরকার
পৃথিবীর বার্ষিক গতির
জন্য
আকাশের
নক্ষত্রগুলো প্রতিদিন পশ্চিম
দিকে
প্রায়
এক
ডিগ্রী
(৪
মিনিট)
সরে
যায়।
ফলে
মাসের
১৫
তারিখে
রাত্রি
সাড়ে
নয়টায় আকাশে
যে
নক্ষত্র যে
অবস্থানে থাকে
১৫দিন
পর
(১৫
* ৪=৬০ মিনিট) এক
ঘন্টা
আগেই,
অর্থাৎ
রাত্রি
সাড়ে
আট
টার
সময়
আকাশের
নক্ষত্রগুলি ঠিক
সেই
অবস্থাতেই থাকে।
একইভাবে ৩০দিন
পরে
ঠিক
দুই
ঘন্টা
আগে,
অর্থাৎ
সন্ধ্যা সাড়ে
সাতটার
সময়
নক্ষত্রগুলি ঠিক
একই
অবস্থানে দেখা
যাবে।
এই
মানচিত্রে ৪০টি
তারকা
মন্ডলের প্রায়
৩৪০
টি
নক্ষত্রের অবস্থান দেখানো
হয়েছে।
নক্ষত্র মন্ডলী
সমূহের
উজ্জ্বল নক্ষত্রের সঙ্গে
রেখা
টেনে
তাদের
কাল্পনিক আকৃতি
দেওয়া
হয়েছে।
শীতকালের রাতের
আকাশে
উল্লেখ্যযোগ্য যে
সমস্ত
নক্ষত্র মন্ডল
দেখা
যাবে
সে
সমস্ত
নক্ষত্র মন্ডলের বর্ণনা
নিম্নে
দেওয়া
হল:
এনড্রোমিডা(ANDROMEDA): শরৎকালের রাতের
আকাশে
বলেছিলাম পেগাসাসের সঙ্গে
আরেকটি
মন্ডল
সংযুক্ত, সেটি
হল
এনড্রোমিডা। পেগাসাসের উত্তর
কোনের
তারাটিই এনড্রোমিডার প্রথম
তারা
Sirrah (উত্তর
ভাদ্রপদ)।
এই
মন্ডলটি চেনা
মোটেই
কঠিন
কিছু
না,
পেগাসাসের বিশাল
চুতুর্ভূজের উত্তর
পূর্ব
কোন
দিয়ে
এনড্রোমিডার চারটি
উজ্জ্বল তারা
বক্র
রেখার
সৃষ্টি
করেছে।
পৌরানিক কাহিনীতে রাজা
সিফিয়াস ও
রাণী
ক্যাসিওপিয়ার মেয়ে
এনড্রোমিডা। ২.১ প্রভার Sirrah এই মন্ডলের উজ্জ্বল তারা।
সবচেয়ে
পরিচিত
এবং
সবচেয়ে
দুরের
বস্ত
যা
কিনা
খালি
চোখে
দেখা
যায়
সেই
এনড্রোমিডা গ্যালাক্সি এই
মন্ডলের অন্তর্গত। সর্পিল
আকৃতির
এই
ছায়াপথের দূরত্ব
২.২ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। বাইনোকুলারে এর
উপবৃত্তাকার আকৃতি
ধরা
পরে।
এনড্রোমিডার M32 ও
NGC205 নামক
দুটি
উপ-গ্যালাক্সি আছে। বড় দুরবিন
ছাড়া
এদের
দেখা
সম্ভব
নয়।
পিসিস(PISCES): পেগাসাস এবং
সিটাসের মাঝে
অবস্থিত রাশি
চক্রের
দ্বাদশ
রাশি
Pisces (মীন)। ইংরেজি অক্ষর
“ V ” আকৃতির
মন্ডলটি খুজে
বের
করা
কিছুটা
কষ্টকর,
কারন
এর
সবচেয়ে
উজ্জ্বল নক্ষত্রটির প্রভা
৪,
বাকি
সদস্য
গুলো
আরো
অনুজ্জ্বল। সূর্য
প্রতি
বৎসর
২১
মার্চ
এই
মন্ডল
দিয়ে
দক্ষিন
দিক
থেকে
উত্তর
দিকে
খ-বিষুব অতিক্রম করে।
এই
বিন্দুটি Vernal Equinox নামে পরিচিত। ইটা
পিসি
নক্ষত্রের সামান্য পশ্চিমে M74 নামে
একটি
ছায়াপথ
(Galaxy) আছে।
ছায়াপথটির উজ্জ্বলতা এত
কম
যে
বড়
দুরবীনে Long Exposure এ তোলা
ছবিতেই
ভাল
ভাবে
দেখা
সম্ভব।
ক্যাসিওপিয়া(CASSIOPEIA): উত্তর আকাশে
ক্যাসিওপিয়া নক্ষত্র মন্ডলটি তার
M অথবা
W আকৃতির
জন্য
খুব
সহজেই
চোখে
পড়ে।
ক্যাসিওপিয়া মন্ডলটিকে চেয়ারে
বসে
থাকা
একজন
মহিলার
কল্পনা
করা
হয।
গ্রীক
পৌরানিক কাহিনীতে ক্যাসিওপিয়া আতন্ত
অহংকারী ছিল।
তার
মতে
মেয়ে
Andromeda জলদেবীদের চেয়েও
সুন্দরী। ফলে
তারা
জলদেবতা Neptune এর ক্রোধের শিকার
হয়।
পরবর্তীতে আবশ্য
Perseus -এর
সাহায্যে Andromeda রক্ষা পায়।
এখানে
একটি
বিষয়
লক্ষনীয় যে
সপ্তর্ষি মন্ডল
ও
ক্যাসিওপিয়া ধ্রব তারার
দুই
বিপরীত
দিকে
অবস্থিত। এদের
একটি
মন্ডলকে দেখা
না
গেলে
অন্যটিকে অবশ্যই
দেখা
যাবে।
বৎসরের
একটি
বিশেষ
সময়ে
এদের
এক
সঙ্গে
ধ্রব
তারার
পূর্ব
ও
পশ্চিম
পাশে
দেখা
যায়।
ক্যাসিওপিয়া মন্ডলে
কয়েকটি
অনুজ্জ্বল তারা
স্তবক
আছে
বড়
দুরবিন
ছাড়া
এদের
দেখা
যাবে
না।
অ্যারিস(ARIES): রাশি চক্রের
প্রথম
রাশি
মেষকে
দেখা
যাবে
এনড্রোমিডা মন্ডলের ঠিক
দক্ষিন
পূর্বে। মেষ
মন্ডলের উজ্জ্বল দুটি
তারা
খুব
সহজেই
চোখে
পরে।
এর
ছয়টি
তারা
নিয়ে
প্রাচীন জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা একটি
মেষ
কল্পনা
করত।
হলুদ
দত্যকার Hamal মন্ডলটির সবচেয়ে
উজ্জ্বল তারা।
৭৬
আলোকবর্ষ দুরে
অবস্থিত Hamal এর প্রভা
২.০। এই মন্ডলে
উল্লেখ্য করার
মত
কোন
আকাশ
বস্তু
(Sky Object) নেই।
সিটাস(CETUS): সিটাস উত্তর
আকাশের
একটি
বৃহৎ
নক্ষত্র মন্ডল।
রুপকথায় সিটাস
একটি
জলদানব। জুপিটারের নির্দেশে এনড্রোমিডাকে আক্রমন
করতে
উদ্ধত
হয়েছিল। সিটাল
মন্ডলে
দুটি
আকর্ষনীয় নক্ষত্র আছে।
তৃতীয়
প্রভার
টাওসেটি আমাদের
নিকটর্তী সদস্য।
হলুদ
বামন
শ্রেনীর নক্ষত্রটি রয়েছে
মাত্র
১১
আলোকবর্ষ দুরে।
ওমিকরন
সেটি
(Mira) একটি
পরিবর্তনশীল নক্ষত্র। Mira ৩৩০
দিন
পরপর
৩
থেকে
৯
প্রভা
পর্যন্ত উজ্জ্বলতার পরিবর্তন করে।
এরিডেনাস(ERIDANUS): এরিডেনাস উত্তর
আকাশে
Rigel নক্ষত্রের পশ্চিম
পার্শ্ব হতে
শুরু
হয়ে
নদীর
মত
আকাবাকা পথে
প্রায়
নয়টি
নক্ষত্রমন্ডল জুড়ে
দক্ষিণ
আকাশে
Hydrus মন্ডলে
গিয়ে
শেষ
হয়েছে।
এটি
সমগ্র
আকাশের
ষষ্ঠ
বৃহত্তমত নক্ষত্র মন্ডল।
Achernar যার
আরবী
অর্থ
নদী
মুখ,
এই
মন্ডলের সবচেয়ে
উজ্জ্বল নক্ষত্র। নীল-সাদা বর্ণের নক্ষত্রটির উজ্জ্বলতা ০.৫ এবং দুরত্ব
৪৫
আলোকবর্ষ। Achernar ছাড়া বাকি
সব
গুলো
নক্ষত্রের প্রভা
৩
এর
বেশী।
তবে
খালি
চোখে
Eridanus এর
সম্পূর্ন আকৃতি
দেখা
যায়।
পারসিয়াস(PERSEUS): উত্তর আকাশে
পারসিয়াসের অবস্থান এনড্রোমিডা ও
অরিগা
মন্ডলের মাঝে।
গ্রীক
পৌরানীক কাহিনীতে পারসিয়াসকে নায়কের
মর্যাদা দেওয়া
হয়,
কারন
পারসিয়াস জলদানব
সিটাস
এর
কবল
থেকে
রাজকন্যা এনড্রোমিডাকে উদ্ধার
করে।
গ্রীকরা পারসিয়াসের এক
হাতে
তরবারি
অন্য
হাতে
মেডুসার মাথা
কল্পনা
করত।
Algenib পারসিয়াসের উজ্জ্বল নক্ষত্র। হলুদ
সুপার
জায়েন্ট শ্রেনীর নক্ষত্রটির উজ্জ্বলতা ১.৮ । পারসিয়াস মন্ডলে
একটি
পরিবর্তনশীল নক্ষত্র আছে।
Algol ২
দিন
২১
ঘন্টা
পরপর
২.২ থেকে ৩.৫ পর্যন্ত উজ্জ্বলতার পরিবর্তন (Fluctuates) করে। HVI 33 ও HVI 34 এই মন্ডলের দুটি
যুগ্ম
ও
মুক্ত
তারা
স্তবক।
স্তবক
দুটিকে
অন্ধকার রাত্রিতে খালি
চোখেই
দেখা
যায়।
ওরিয়ন(ORION): আকাশের নক্ষত্র মন্ডলী
সমূহের
মধ্যে
অরিয়ান
বা
কালপুরুষ সবচেয়ে
বৈশিষ্ট্য মন্ডিত। কোন
নক্ষত্র মন্ডলই
কালপুরুষের মত
এত
অধিক
সংখ্যক
উজ্জ্বল নক্ষত্রের অধিকারী নয়।
আর
সম্ভবত
এ
কারনেই
কালপুরুষ সারা
পৃথিবীতে এত
পরিচিত। রুপকথায় ওরিয়ন
একজন
বীর
যোদ্ধা। তার
এক
হাতে
আছে
ঢাল
অন্য
হাতে
মাগুর।
ওরিয়ন
মন্ডলের সবচেয়ে
উজ্জ্বল নক্ষত্র হচ্ছে
রাইজেল। উজ্জ্বলতার দিক
থেকে
সমগ্র
আকশে
এর
স্থান
সপ্তম।
০.১ প্রভার নক্ষত্রটির দুরত্ব
৯০০
আলোকবর্ষ। লাল
বর্নের
বেটেলজুস একটি
রেড
সুপার
জায়েন্ট, নক্ষত্রটি তার
পারমানবিক জ্বালানী প্রায়
সম্পূর্ন শেষ
করে
ফেলেছে। সূর্যের চেয়ে
৬০০
গুন
বড়
নক্ষত্রটির পৃষ্ঠ
তাপমাত্রা মাত্র
৩০০০
ডিগ্রী
কেলভিন। ওরিয়নকে চেনার
সহজ
উপায়
হল
এর
কোমরে
যে
তিনটি
উজ্জ্বল নক্ষত্র একটি
সরল
রেখার
সৃষ্টি
করেছে
সে
গুলি
কে
চিনে
ফেলা।
প্রায়
একই
উজ্জ্বলতার তিনটি
নক্ষত্রের পাশাপাশি অবস্থান আকাশের
অন্য
কোথাও
চোখে
পরে
না।
ওরিয়ন
মন্ডলে
দুটি
বিখ্যাত নিহারীকা আছে।
একটি
M42 বা
“গ্রেট
নেবিউলা”।
এই
নিহারীকা থেকে
এখনও
নক্ষত্রের সৃষ্টি
হচ্ছে।
অপর
নিহারীকাটি নাম
“হর্সহেড নেবিউলা”।
নিহারীকাটি দেখবার
জন্যে
বিশেষ
ধরনের
ফিল্টার ব্যবহার করতে
হয়।
টউরাস(TAURUS): টউরাস টলেমী
(১৫০
খ্রীস্টাব্দে টলেমী
তার
আলমাজেষ্ট গ্রন্থে ৪৮টি
তারামন্ডলের পূর্ন
বিবরন
প্রকাশ
করে)
কর্তীক
বর্নিত
নক্ষত্র মন্ডলের একটি।
টউরাসকে খুজে
বের
করা
খুব
সহজ।
কালপুরুষের বেল্টের সংযোগকারী সরল
রেখা
টউরাসের প্রথম
নক্ষত্র Aldebaran কে নির্দেশ করে।
বাংলায়
একে
রোহিনী
বলা
হয়।
কমলা
রংয়ের
এই
নক্ষত্রটি আমাদের
থেকে
৬৮
আলোকবর্ষ দুরে।
এ
মন্ডলে
রয়েছে
আকর্ষনীয় দুটি
নক্ষত্র স্তবক।
Aldebaran এর
আশে
পাশের
৫
ডিগ্রী
অঞ্চল
জুড়ে
প্রায়
২০০টি
নক্ষত্র মিলে
সৃষ্টি
করেছে
Hyadis Cluster।
এটি
একটি
মুক্ত
স্তবক।
বাইনুকুলার দিয়ে
১৫০
আলোকবর্ষ দুরের
এই
স্তবকটি দেখা
যায়।
মন্ডলের দ্বিতীয় স্তবকটি সপ্তর্ষি মন্ডল
ও
দ্রুব
তারার
পর
এদেশে
সবচেয়ে
পরিচিত
সেই
“সাতভাই”
বা
Pleiades Cluster (কৃত্তিকা)।
Pleiades এর
সাতটি
নক্ষত্র খালি
চোখেই
দেখা
যায়।
তাই
সাতভাই
নামে
গ্রাম
অঞ্চলে
এর
খ্যাতি
রয়েছে।
ইংরেজিতে স্থানীয় ভাবে
এদের
Seven Sister বলা
হয়।
তবে
জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা এই
মুক্ত
স্তবকটিতে দুইশতাধিক নক্ষত্র থাকার
কথা
বলেছে।
মানচিত্র দেখবার
সময়:
০১ নভেম্বর রাত ১১:০০ টায়
০১ ডিসেম্বর রাত ০৯:০০ টায়
০১ জানুয়ারী রাত ০৭:০০ টায়
০১ ডিসেম্বর রাত ০৯:০০ টায়
০১ জানুয়ারী রাত ০৭:০০ টায়
গ্রন্থপুঞ্জি:
জ্যোতিস্ক বিজ্ঞান
তারা পরিচিতি
নক্ষত্র পরিচয়
The Night Sky
তারা পরিচিতি
নক্ষত্র পরিচয়
The Night Sky
October 31, 2013
খবর বিভাগঃ
আকাশ পর্যবেক্ষণ
বাংলা নিবন্ধ
0 comments: